Baba Lokenath Brahmachari Quotes

This image has an empty alt attribute; its file name is Babalokenathny5-01-2-851x1024.jpgThis image has an empty alt attribute; its file name is Babalokenathny6-01-416x1024.jpg
Baba Lokenath Brahmachari Baba Lokenath Brahmachari

শ্রীশ্রী লোকনাথ কথামৃত

“রণে বনে জলে জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়বি,
আমায় স্মরণ করবি, আমিই তোকে রক্ষা করব।”

“আমি শতাধিক বৎসর পর্বত পরিভ্রমণ করে বড় একটা ধন কামাই করেছি। এ শরীরের উপর কত বরফ জমে জল হয়ে গেছে। তোরা ঘরে বসে খাবি।”

“আমি কে জানার দরকার নেই, শুধু অন্তর দিয়ে প্রাণভরে আমার দয়াভিক্ষা চাইবি, তাহলে আমি তোদের সব কষ্টের থেকে মুক্তি দেব।”

“তোদের কাতর ডাকে আমার অন্তর বিগলিত হয়, তাইতো তোদের কাছে ধরা না দিয়ে পারি না।”

“আমার যা খুশি, আমি তাই করতে পারি, তোদের বিশ্বাস নেই, তাই তোদের চাওয়াটাও ঠিক হয় না, পাওয়াও হয় না।”

“যারা ভক্তি বিশ্বাস নিয়ৈ আমায় ‘বাবা’ বলে ডাকে, আপদে বিপদে আমার উপরই নির্ভর করে, তাদের আর্ত ক্রন্দনে আমার অন্তঃকরণ আর্দ্র হয়। দয়া হয়। এই দয়ার মধ্যে দিয়েই আমার শক্তি প্রবাহিত হয়ে তাদের দুঃখ দূর করে।”

“আমি নিত্য বস্তু। আমার বিনাশ নেই, এবং আমার শ্রাদ্ধও নাই। যারা আমার আশ্রিত, তাদের অনিষ্ট করে এমন শক্তি কারুর নেই।”

“আত্মনিষ্ঠ যোগই মুক্তির একমাত্র উপায়। ভক্তিই সার বস্তু। মন্ত্র আদি সহায়ক মাত্র। ভক্তিকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চল,
তোদের কে বাধা দেবে! তোরা যে আমারই সন্তান।”

“ওরে, তোরা, তোরা ভাবিস না এই দেহপাতের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে। আমার শরীরে থাকাকালীন ঠিক যেমন ছিলাম তোদের কাছে, ঠিক তেমনি কাছের জনটি হয়ে আজও আছি, চিরকাল থাকবো।”

“কেবল এই শরীর আগুনে জ্বলে ভস্মীভ‚ত হবে। কিন্তু যে ‘আমি’ অবিনশ্বর তার বিনাশ নেই। সে যে কখনো ফুরায় না। সেই আমি তোর কাছে, তোর মধ্যে সব সময় আছি। তুই একটু চেষ্টা কর তাহলেই দেখতে পাবি, একটু অন্তর দিয়ে বোঝার চেষ্টা কর তাহলেই বুঝতে পারবি- আমি আছি, আছি, আছি।”

“মনে হয় এই বিরাট বিশ্বসৃষ্টির মধ্যে আমি ওতপ্রোত হয়ে রয়েছি, আমার মধ্যেই বিরাজ করছে সমগ্র সৃষ্টি, আর সমগ্র সৃষ্টির আদিতে, মধ্যে এবং অন্তে আমিই শাশ্বত হয়ে আছি। একথা বলা কওয়ার নয়, তাই তো সারাদিন গৃহস্থ মানুষের ছোট ছোট সুখ-দুখের মধ্যে সময় কাটিয়ে চলেছি।”

“তোদের মতন খাই, দাই, মলমূত্র ত্যাগ করি, তাই তোরাও আমাকে তোদেরই মতন একজন বলে ভেবে নিস। আমাকে তোরা শরীর ভেবে ভেবেই সব মাটি করলি। আমি যে কে, তা কাকে বোঘাব। সবাই যে ছোট ছোট চাওয়া নিয়েই ভুলে রয়েছে আমার প্রকৃত আামিকে।”

“প্রায় অর্ধশতাব্দীরও অধিক কাল হিমালয়ে সাধনকালে গুরুদেব আশাকে তাঁর শাস্ত্রলব্ধ জ্ঞানের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাগুলি অনুশীলন করিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর উপর সর্বতোভাবে সমর্পণ করে আমিও তাঁর প্রদর্শিত জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম এবং অষ্টাঙ্গ যোগের সবকটি পথে চলে পূর্ণ যোগের কত পথই অতিক্রম করেছি, কোথাও এতটুকু সন্দেহ হলে, তিনি মাতার ¯েœহ দিয়ে পরম ধৈর্য সহকারে আমাকে বুঝিয়েছেন, তাঁর উপর অন্ধবিশ্বাস নিয়ে আমিও কত সহজে এগিয়ে গেছি পরম লক্ষ্যের দিকে। কঠিনতম যোগসাধনার সব কটি সোপান কেবল তাঁরই কৃপায় আমি পার হতে সক্ষম হয়েছি। সমাধির গভীর আত্মমগ্ন অবস্থায় কত দিন কেটে গেছে।”

“সমাধিস্থ আবস্থায় অবস্থানকালে কত বরফ এই শরীরের উপর জমেছে, আবার গলে জল হয়ে গেছে, তার খেয়াল করারর মতন শরীর-মনের চেতনা তখন আমার কোথায়?”

“সমাধির উচ্চতম শিখরে বহুদিন অবস্থান করার পর পৌঁছালাম সেই পরমতত্তে¡। যেখানে আমি ও সমগ্র অখিল ব্রহ্মাÐের অস্তিত্বের মধ্যে নেই কোনো ভেদ। মিলেমিশে একাকার।”

“পরমপুরুষকার এবং ঐশীকৃপায় মানুষ্য-শরীরে এই উপলব্ধির
পারে আর কোনো উচ্চতর উপলব্ধি সম্ভব নয়।”

“আমি এত পাহার, পর্বত ভ্রমণ করেছি কিন্তু তিনজন বই ব্রাহ্মণ দেখিনি- মক্কাতে আবদুল গফর এবং ভারতে তৈলঙ্গস্বামী এবং আমি স্বয়ং।”

“সেই ভ্রমণ কালে আমাদের দেহ সম্পূর্ণরূপে অনাবৃত ছিল, উলঙ্গ অবস্থায় আমরা এতকাল হিমালয়ে কাটিয়েছিলাম এবং বরফের রাজ্যে বহুকাল চলার ফলে আমাদের শরীরের চর্মের ওপরে এক অভিনব শ্বেত বরফের ন্যায় চর্ম আপনার থেকেই হয়ে গেছিল। আমারা ঠাÐায় আর অত কষ্ট পেতাম না। এইভাবেই চলতে চলতে আমরা মানস সরোবরে পৌঁছালাম।”

“বেণী, তুই কামাখ্যায় যাচ্ছিস যা, আমি চললাম আমার কর্মভ‚মিতে, তবে তোর মনে যখন আমায় দেখতে ইচ্ছা জাগবে, তুই আমায় অন্তরেই ডাকিস, আমি সূ²শরীর নিয়ে মুহুর্তেই পৌঁছে যাব তোর কাছে।”

“আর নিন্দা, অপমান সেও তো বাইরের জিনিস। আমার ‘আমি’-টিকে সে যে কখনো স্পর্শ করতে পারে না। একটু ভেবে দেখ, যদি এই কয়েকটা অবোধ মানুষের দেওয়া নিন্দা, অপমান, শরীরিক পীড়নেই আমি দুঃখী হয়ে কষ্ট পাই, তাহলে আমার হৃদয়ে বহুভক্তের, শরণাগতের দুঃখ, কষ্ট,জ্বালা-যন্ত্রণা আমি কীভাবে বইব বল ? আমার নিজের কষ্ট বলে যে আর কিছুই নেই, সবার কষ্টই যে হৃদয়ে নিজের মতন করে বাজে, তাকে আমি কীভাবে সহ্য করব ?”

“আমার পরমদয়াল গুরুদেব সাধন অবস্থায় মনকে বাহ্যিক সব অবস্থার থেকে গুটিয়ে নিয়ে নিজের ভেতরে আত্মমগ্ন হবার শিক্ষা আমায় দিয়েছেন, অনেকটা কচ্ছপের মতন। ইচ্ছামাত্রেই বেতরে গুটিয়ে নিতে পারি নিজের সব ইন্দ্রিয়কে। বাইরের খোলসটার উপর মান-অপমান, নিন্দা-স্তুতি, সুখ-দুঃখের কত খেলাই হয়ে যাচ্ছে, ওতে আমার নিজস্ব কোনো অভিমান নেই, তাই এই সব থেকে আমি সতন্ত্র।”

“ওরে, ওা যে বড় দুঃখি, ওরা যে বড় অসহায়। ছোট ছোট চাওয়াগুলোও যে ওদের পূরণ করে দেওয়ার কেউ নেই, তাই তো ওরা আমার কাছে কত কষ্ট স্বীকার করে ছুটে আসে, ওদের দুঃখের কথা আমি শুনি বলেই তো আমার কাছেই ওদের যত আবদার, অধিকার।”

“সংসারের কঠিন পথে চলে ওরা যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে, ওদের মনে ভক্তি বিশ্বাসের ভাব আসবে কোথা থেকে বল ?
“ওদের দুঃখ দেখে আমার দয়া হয়, তাতেই ওদের পাওয়া হয়ে যায়। কিন্তু তুই বিশ্বাস কর, আমি কিছুই করি না। ওদের বিশ্বাস আমিই ওদের দুঃখ দূর করি। আমার কথা যখন মানবে না তখন আমার চুপ করে থাকা ছাড়া আর কী উপায় আছে বল।”

“সন্ন্যাসীর জন্য সমগ্র বিশ্বই গৃহসমান। আমি এখনই চলে যেতে প্রস্তুত, কিন্তু তোরা যে কাজটা ভালো করছিস না, তাই তোদের মঙ্গলামঙ্গলের কথা চিন্তা করেই আমি কষ্ট পাচ্ছি।”

“নিজেকে জানতে গেলে গুরুমুখে শাস্ত্রের কথা শুনে নে আর তাঁর কথাই মূর্তিমান শাস্ত্রজ্ঞানে তার অনুশীলনে জীবনের সব শক্তি লাগিয়ে দে, এতটুকুও নিজের জন্য আলাদা করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করিস না, তোর দেওয়ার মধ্যে দিয়ে পাওয়ার পথটা আপনা হতে খুলে যাবে।”

“গীতা পাঠ্য-পুস্তুক নয়, হওয়ার সাধনা” বাবা বলেছেন- গীতা কেবল একটি পাঠ্য-পুস্তক নয়, যা তুই নিয়মিত পাঠ করবি, এবং কন্ঠস্থ করবি সব সংস্কৃতের শ্লোক। গীতা যে হওয়ার সাধনা।”

“উপায়-তাঁর শরণাগতি। তোর মন, বুদ্ধি, অহংকার নিয়ে তোর যে ব্যক্তিসত্তা তাকে তাঁর চরণে সমর্পণের চেষ্টা করতে হবে তোকে। এ একদিনের সাধনা নয়। তাঁর কৃপায় এক মুহূর্তেই তোর দুঃখের নিবৃত্তি হবে, তবে সেই মুহূর্তের জন্য, তোকেও চেষ্টা করতে হবে, নিজেকে তাঁর দিকে মেলে ধরার, অপেক্ষায় থাকতে হবে পরম ধৈর্ধ্য সহকারে।” “এইভাবে সব কর্মের মধ্যে তাঁকে ছাড়া যখন আর তোর কিছুই করা সম্ভব হবে না, দিনে দিনে তিনিই যখন তোর অনুভ‚তিতে সর্ভময় কর্তারূপে নিজেকে প্রকাশ করবেন, তখন দেখবি গীতার ‘কর্মযোগ’ ‘ভক্তিযোগ’ ‘জ্ঞানযোগ’-সব যোগই জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মানুষের শরীর নিয়ে এই পৃথিবীতে কেন এসেছিস তখনই বুঝবি। তার আগে নয়।”

আগে ভোগ পরে ত্যাগ
“আগে গ্রহণ তবে ত্যাগ। ত্যাগ কি আর জোর করে করার জিনিস। ও যে অতি স্বাভাবিক এক অবস্থা। তাঁকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে হয়। তাঁর দিকেই মনটা দে। তার কথাই চিন্তা কর। তাঁর কৃপায়, তাঁর প্রেমে, তাঁর করুণায় যে কী বিরাট আদর্শ লুকিয়ে আছে তার ধ্যান কর। দেখবি যেটুকু রাখবার তিনিই রাখবেন, যেটুকু ত্যাগ করাবার তিনিই ত্যাগ করিয়ে দেবেন। নিজেকে বড় না করে তাঁকে বড় কর। নিজে কর্তা না সেজে তাঁকে কর্তা জ্ঞান করার চেষ্টা কন।”

“দুঃখী মানুষ আমার কাছে এসে চোখের জলে অন্তরের কথা বলে, আমি যে তার মধ্যে তাঁকে দেখে আত্মাহারা হই, আর সেই অবস্থার মধ্যেই ভক্তবৎসল ভগবান ভক্তের মনের ইচ্ছাটি পূরণ করে দেন। আমি কিছুই করি না। ভক্ত আমাকে দেখে, তাই ভাবে আমিই সব করি।”

“আমি তো ভোগ করে শেষ করতে বলেছি, উপভোগের কথা তো বলি নি। ভোগ আর উপভোগের পার্থক্য আছে, যেমন পতি আর উপপতি! শাস্ত্রবিধি অতিক্রম কওর স্বেচ্ছাচার যা করা যায় তাই উপভোগ, তাতে শান্তি হয় না; বিধিপূর্বক ভোগে হয়।”

“বাক্য বাণ, বন্ধু-বিচ্ছেদ বাণ ও বিত্ত-বিচ্ছেদ বাণ এই তিনটি বাণ সহ করতে পারলে মৃত্যুকে জয় করা যায়।” “কৌপীণ শাসন দÐ, মনকে শাসন করে, যাতে অবশভাবে নীচ কর্মে না যেতে পারে।”

সংসার-আশ্রমে থেকে সংসারের কর্তব্যকর্ম করে যতটা সাধনা করার তা হয়েছে। এবার তোকে নিরালায় একান্তে গিয়ে যোগের সাধন করতে হবে।

“তুই যোগী হয়েছিস, আমি চাই তুই মহাযোগী হ। আর তার জন্য সংসারের সমস্ত সম্মন্ধ পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণ একনিষ্ঠ হয়ে যোগস্থ না হলে প্রকৃত জীবম্মুক্তির অবস্থা লাভ করা সম্ভব নয়। তাই আলাদা কোথাও আমার মতন একটা ঘর করে বসে সাধনার গভীরে ডুবে যা।”

ওরে এই টুকু দেখার জন্যই তো তোকে এত কটু কথা শোনালাম। তুই ধন্য, তুই ঠিক পথে গুরুলাভ করেছিস। তোর হবে। তুই ঠিক পৌছাতে পারবি। ওরে, সাধনপথে চলতে গিয়ে যে নিজের গুরুকে প্রাণের অধিক ভালোবাসতে না শিখেছে তাঁর কাছে যে পরম সত্য কখনোই প্রকাশ হতে পারে না।”

“হরিচরণ আমি কল্পতরু হইলাম, আমার নিকট হইতে যাহা ইচ্ছা কর গ্রহণ করিতে পার।”

“যামিনী! কী কার্য হইতেছে ?” যামিনীকুমার বলিলেন- “আপনি আমার মুখে অন্ন তুলিয়া দিতেছেন আর আমি চিবাইয়া গলাধঃকরণ করিতেছি।” তাহা শুনিয়া বাবা বলিলেন “গুরু শিষ্যের এই পর্যন্তই করেন-মুখে উঠাইয়া দেন এই পর্যন্তই; শিষ্য নিজে চিবাইয়া উদরস্থ করিবে।”

“আমি হিমালয় পর্বত হইতে নামিয়া নি¤œভ‚মিতে আসিয়া একটি ফুলের বাগান প্রস্তুত করিয়া গেলাম। সময়ে এই বাগানে এক একটি ফুল ফুটবে, আর ফুলের গন্ধে জগৎ আমোদিত হইবে।’ একশত বৎসর পাহাড় পর্বত বেড়াইয়া বড় একটি ধন কামাই করিয়া আনিয়াছি। তোরা বসে খাবি।”

“তোর ভাব জানি বলেই তো তোর দুধ আমি গ্রহণ করিনি তুই দুধ আমাকে দিয়েছিস, সুতরাং ওই দুধের উপর তোর যে সত্ত¡ ছিল তা আর নেই, তবে তোকে আশ্রমের ককুরকে ওই দুধ খেতে না দিয়ে তাড়িয়ে দেবার অধিকার কে দিল ?”

“তুই তোর নিজের দেহ, মন, প্রাণ, স্ত্রী-পুত্র, বিষয়-সম্পত্তি সর্বস্ব আমাকে অর্পণ করে আমারে আশ্রমের উঠানে রোদে জলে কত কষ্ঠ সহ্য করেছিস, তোর কষ্ঠে আমার হৃদয় আর্দ্র হয়েছে, আমি তোর কষ্টে কেঁদেছি। এখন তুই সুস্থ। তোর আর কোন চিন্তা নেই। তুই আমাকে যা দিয়েছিস, তা আমারই রইল, কেবল তোকে ভোগাধিকার দিলাম। এখন নিশ্চিন্ত হয়ৈ ফিরে যা। এখন থেকে তোর সব দায়িত্ব আমার।”

“কোনো সময়ে আমার মনে ইচ্ছে হয় যে আমি মরা বাঁচাতে পারি কি না দেখব। ইচ্ছামাত্রেই আমার কাছে মৃতকল্প রোগীরা আসতে শুরু করে। এই সময় কেবল বাক্য দ্বারা ৯৪টি মৃতপ্রায় রোগীকে আরোগ্য করেছি। এখন আর সে ইচ্ছা হয় না। তবে আজও যদি কেউ আমার ইচ্ছা করিয়ে নিতে পারে, তাহলে সে এখনও আরোগ্য হতে পারে।”

“ক্ষুন্নিবারণের জন্য দেহের যেমন প্রয়োজন বোধ, বিষ্ঠামূত্র ত্যাগের জন্য দেহের যেমন প্রয়োজন বোধ, ওইরূপ প্রয়োজন বোধ যালা আমার জন্য হয়, সে এখনও ইচ্ছা করিয়ে নিতে পারে।”

“সময় শেষ করে এসেছিস্। এখন আর কী হবে ? আমি তো তাঁকে ঘরে দেখতে পেলাম না। হয় হয়ে গেছে অথবা তাঁর গুরু তাঁকে দেহ ছেড়ে যাওয়ার শক্তি দিয়েছেন। আচ্ছা তুই যা, মঙ্গলবারের মধ্যে যদি তার আসে তবে বুঝবি ভয় নেই। চিন্তা করিস না। আমি সেখানে যাচ্ছি।”

“ওরে, কাছের ভগবানকে উপেক্ষা করে, উৎপীড়ন করে, কোন দূরের ভগবানের খোঁজ নিতে আমার কাছৈ এসেছিস ?”

“ওরে, আমায় নিয়ে যাবার জন্য এত ব্যস্ত হয়ে উঠেছিস কেন ? আমি যে সর্বর্দাই তোর সঙ্গে সঙ্গে আছি, আমি যে সর্বত্রই আছি রে। এই শরীরটাকে নিয়ে টানাটানি করে কী হবে ? আমি কি

শরীর ?”

“ওরে তোদের তো একদিন বলেছি, নিজেকে ছাড়া দুইয়ের অস্তিত্ত¡ এই বিরাট ব্রহ্মাÐের কোথাও দেখি না। আমিই যে সব ঞয়েছি। আমি আর কে জন্ম নেবে বল ? এ রহস্য তোরা বুঝবি না। বুঝতে গেলে হতে হবে। সে চেষ্টা তোদের কোথায় ? একটা সন্তান পেলেই তোরা খুশি, তবে তাই নিয়েই খুশি থাক।”

“যদি তোদের যাওয়া একান্তই প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে তোদের বাধা দেবো না। তবে ওকে রেখে যা।”

“ওরে, তোদের ঈশ্বরের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকার হল না, দেখলাম নিজেকে। তাঁকে জানতে গেলে হতে হয়।”

“ওই টাকা ও দ্রব্যাদি আমার কাছে দিলেই চলবে, কলকাতায় পাঠাবার কোন প্রয়োজন নেই, আমিই কালীঘাটের কালী।” যিনি কৃষ্ণ, যিনি কালী, তিনিই শিবরূপে লোকনাথ।”

“কাকের শব্দ তোমার কাছে বিকৃত বোধ হয়েছিল বলে তুমি তাকে তাড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হয়েছো, কিন্তু পÐিত, তোমার শব্দেও তো আমার কাছে বিকৃত বোধ হয়।”

“অন্ধ সমাজ, চোখ থাকতেও অন্ধের মতনই চলছে।”

“যা মনে লয় তাই করবি, আর বিচার করবি।”

“কেমন করে বাড়ি দিবি ? ওই যে তোকে বললাম, বিচারহীন হয়ে, অন্ধ হয়ে, কর্ম করবি না, ওই বিচারই তোকে আটকাবে।”

“যে-কর্ম তোমার মনে তাপের সৃষ্টি করে তাই পাপ।”

“ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, যে সন্তান মায়ের আদেশ পালন করে, ভগবান তার মঙ্গল করেন।” “দেখিস, এত বড় পদ পেয়ে মোহগ্রস্ত হয়ে যেন সত্যকে ভুলে যাস না।” “দুঃখ এবং দরিদ্রতায় ভরা সমাজের দুখ দূর করার সর্বদা চেষ্টা করিস।”

জগতে যখন মানুষের শরীর নিয়ে এসেছিস তখন দশের সেবা করে, তাঁকে প্রসন্ন করে জীবন সার্থক করে নে-এতে তোরও মঙ্গল, জগতেরও মঙ্গল।”

“ওই চাওয়াটা তোর নয় একটু চা, বাদ বাকিটুকু আমি করে দেব। তোরা এক পা আমার দিকে এগিয়ে আায়, আমি তোদের কাছে সাত পা এগিয়ে আসবো।”
“তুমি তাহা করিতে পার না। করিতে চেষ্টা কারয়া দেখিও, তুমি তাহা করিতে পারিবে না। জীব যতই শ্রেষ্ঠতা লাভ করে, ততই সমাজে যাহাকে নিকৃষ্ট কার্য বলে, সে সকল কার্য সে করিতে পারে না; করিলে তাপ লাগে। কারণ যাহার যে কর্ম শেষ হইয়া গিয়াছে সে তাহা করিতে পারে না। তুমি এখন আর হাঁটুতে ভর দিয়া চলিতে পার না।”

“গুরুকে ‘আসন দিবে’ অর্থাৎ গুরুর আদেশ হৃদয়ে ধারণ করিবে। ‘বসন দিবে’ অর্থাৎ আচ্ছাদন দিবে-অভক্ত নাস্তিক প্রভৃতির নিকট তাঁহার আদেশ প্রকাশ করিবে না। ‘বাহন দিবে’ অর্থাৎ ভক্ত ও আস্তিক প্রভৃতির সহিত গুরুর উপদেশ সম্বন্ধে আলোচনা করিবে। ‘ভ‚ষণ দিবে’ অর্থাৎ তাঁহা কৃতী শিষ্য হইবার জন্য যন্ত করিবে-কৃতী শিষ্যই গুরুর ভ‚ষণ। ‘শয়ন দিবে’ অর্থাৎ গুরুর আদেশ হৃদয়ে রাখিবে এবং ক্রমে উহা নিজের প্রকৃতিগত করিয়া লইবে।

Leave a Reply