অনেক ভক্তের মনেই প্রশ্ন আসে শ্রীশ্রীবাবার পূজার কি বিশেষ কোন বিধান আছে। এই প্রশ্ন সর্বত্র বিধিবৎ পূজার অনুষ্ঠান দর্শনে মানুষের মনে আসাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু আজকার ব্যস্ত সাংসারিক জীবনের মধ্যে বিধি অনুষ্ঠানকে বড় করতে গেলে পূজার আর সময় হয়ে ওঠে না, তাই এমন পূজানুষ্ঠান হওয়া উচিৎ যা পূজা উপাসনার মূল উদ্দেশ্যকে সফল করতে পারে। পূজা কেন? তাঁকে প্রসন্ন করার জন্য। চিত্ত শুদ্ধির জন্য। চিত্ত শুদ্ধ হলে আর বাহ্যিক পূজা পাঠের কোন প্রয়োজন হয় না, তখন “যত্র যত্র নেত্র পড়ে তত্র তত্র কৃষ্ণস্ফরে” তখন সর্বং লোকনাথময়ং জগৎ। সর্বত্র তিনিই লীলা বিলাস করছেন, তখন ভক্ত ভগবানের শীলা বিলাস অতি সহজ ও স্বাভাবিক বিধি বিধানের উর্দ্ধে। তোমাদের লোকনাথ ভক্তির পূজার বিধিও হবে অতি সহজ ও সরল ভাবের অনুষ্ঠান। যার মধ্যে অনুষ্ঠান প্রধান নয়, পূজার বহুবিধ সামগ্রীর সংগ্রহ প্রধান নয়, যতটুকু তুমি সহজে সংগ্রহ করতে পারো, মনপ্রাণ দিয়ে প্রভুকে ঠিক ঠিক অপর্ণ করা এবং তার মধ্য দিয়ে এক আত্মিক শান্তির পথকে উন্মুক্ত করা। প্রথম কথা তোমার ঘরে যে শ্রীশ্রীবাবার আসনটি স্থাপনা করছো সেই স্থানটিকে অত্যন্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে। জানবে তোমার মনটিকে পরিষ্কার করার জন্য বাহ্যশুচির বিশেষ প্রয়োজন আছে। বাহ্যশুচিশুদ্ধ পরিবেশ অন্তরের শুচির ভাবকে সহজে জাগ্রত করে, তাই চেষ্টা করবে শ্রীশ্রীবাবার স্থানটি এমন এক স্থানে করা যেখানে তুমি তাঁর কাছে আসন করে বসতে পারো, তাঁকে আত্মবৎ সেবা করতে পারো। আত্মবৎসেবা কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবৎ অর্থে-তুমি যেমনটি ভালবাস। তোমার শরীরটিকে তুমি স্নান করাও, ভাল বস্ত্র দিয়ে আচ্ছাদন কর, ভাল ভাল আহার দাও, ভাল পরিষ্কার শয্যায় শয়ন করাও। তুমি প্রশংসা শুনতে ভালবাস। তোমাকে কেউ তোমার মনের মতন করে সেবা করলে তুমি যেমন প্রসন্ন হও, তাকে ভালবাস ঠিক তেমনিভাবে। নিজের নিজের স্থানে ঈশ্বরকে বসাতে হবে। তুমি বাবা লোকনাথকে নিজের সব থেকে প্রাণপ্রিয় পিতা কিংবা মাতা জ্ঞানে ভালবাস, কিংবা তাঁকে জগতের একমাত্র প্রভুজ্ঞান কর, যে যে ভাবেই তাঁকে ভালবাস, উদ্দেশ্য একটাই, এই পরমপ্রিয় প্রাণপুরুষকে ভালবেসে তাঁর কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মেলে ধরে তাঁকেই সর্বময় জ্ঞান করে নিজে নিঃস্ব হয়ে তাঁরই হয়ে যাওয়া। সব পূজার উদ্দেশ্যই হল তাঁকে প্রসন্ন করে তাঁর আশীর্বাদ লাভ করে ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ চতুর্বর্গ লাভ করা। তাঁর প্রসন্নতায় এক পলকেই জন্মজন্মান্তরের অজ্ঞান অন্ধকার মিটে গিয়ে পবিত্রতম জ্ঞানের উদয় হতে পারে- মানুষ মৃত্যুঞ্জয় হতে পারে। বলছিলাম আত্মবৎ সেবার কথা তুমি যা ভালবাস তাঁকে সেইভাবেই ভালবাসার সাধনা কর। অতি সহজ সরল ভাব নিয়ে,কৃত্রিমতা যেন তোমার এবং ভালবাসার জনের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি না করে। প্রত্যহ স্নানান্তে শুদ্ধ বসন পরিহিত হয়ে তাঁর কাছে আসন করে উপবেশন কর। নিজের আসন নিজে ব্যবহার করবে, দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি যেন তোমার ব্যবহৃত আসন না ব্যবহার করে এই বিষয়ে সচেতন থাকবে (অন্যের ভাব সংস্কার স্পর্শদোষে তোমার ভাব নষ্ট করতে পারে, তুমি তোমার ভাব নিয়ে জগতে এসেছো, সেই ভাবনিয়েই তুমি ভাবতীত হবে)। আসনে বসবে সুখাসনে। অর্থাৎ যেভাবে বসলে তোমার মেরুদÐটি সরল থাকে অথচ তোমার শরীরে কোন অসুবিধা না হয়। আসনশুদ্ধির জন্য কোন মন্ত্র তোমাকে পাঠ করতে হবে না, কেবল অন্তরে ধারণা করবে যে তুমি তোমার ইষ্টগুরুর সম্মুখে আসন করে উপবেশন করছো। এই আসন যেন তোমাকে তোমার ইষ্টদর্শনে সহযোগিতা করে। তাই আসনকে প্রণাম করবে বসবার আগে। ঐ আসনকে শ্রদ্ধা করলে ক্রমে ইষ্টকৃপায় আসন সিদ্ধি লাভ হবে। অর্থাৎ আসন তোমাকে বহুক্ষণ ইষ্টধ্যানের জন্য সহযোগিতা করবে। দেহটিকে চঞ্চল করবে না। প্রথমে তাঁর কাছে বসে আগে তাঁকে প্রাণ দিয়ে আবাহন করবে। তাঁকে কাছে ডাকবে। যেমন নিজের সন্তানকে স্নান খাওয়া করবার জন্য ডাক। তিনি তোমার ডাক শুনতে বড় ভালবাসেন। যদি বল তিনিই তো জগৎকে খাওয়াচ্ছেন, তোমাকে খাওয়াচ্ছেন, তুমি আবার তাঁকে কি খাওয়াবে পরাবে-তিনি যদি সবই নিজে করে নেন তবে আর ভক্তের ঘরে ঘরে ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়ে ঘুরছেন কেন? তিনিই সব এই জ্ঞান। কিন্তু তাঁকে যখন ভালবাসবে তখন ভাববে তুমি না স্নান করালে,না খাওয়ালে গোপাল লোকনাথের খাওয়া হবে না। তুমি অভুক্ত থাকলে তোমার যেমন কষ্ট হয়,শীতে তুমি যেমন শীতবস্ত্র না পরলে কষ্ট পাও, গ্রীম্মে তোমাকে হাওয়া না করলে তোমার যেমন কষ্ট হয়, ঠিক তাঁরও হয় এই ভাবটি যদি তোমার না আসে তাহলে সেবার কোন অর্থই হয় না। তুমি তো চালকলা বাঁধা পুুরোহিতের মত যন্ত্রবৎ পূজা করতে বসনি। তুমি তো বসেছো ভালবাসার তাগিদে- কারণ তুমি বুঝেছ তাঁরই কৃপায়, যে তিন্ইি তোমার প্রকৃত আপনজন- আপদে বিপদে যখন সকলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়, এই স্বার্থান্ধ জগতে, তখন এক পরম পিতা জগৎ গুরু শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী তোমার পাশটিতে এসে বরাভয় মূর্তিতে দাঁড়ান, তুমি তাঁকে স্থ’ূলভাবে দেখ আর দেখ তাঁর সূক্ষ¥ উপস্থিতি এবং তাঁর কৃপায় বিপদে মুক্তির অনুভূতি, সেতো কেবল তোমার আপন জিনিষ। যিনি তোমাকে সর্বদা এমনভাবে কৃপাশ্রয় দিয়ে তোমার সুখদুঃখের সাথী হয়ে আছেন তাঁকে ভালবাসার মধ্যে যদি তুমি কৃত্রিমতার স্থান দাও তাহলে সবই যে পÐশ্রম। তাই বললাম তাঁর সঙ্গে নিজের সম্পর্কটা আরও গভীর করে নেওয়ার জন্যই তো নিত্যপূজানুষ্ঠান। তাঁকে গঙ্গাজল দিয়ে ভাল করে স্নান করিয়ে দাও, মূর্তি নেই তো কি হয়েছে,ফটোটির মধ্যেই যে তিনি বিশেষ ভাবে প্রকট হয়ে আছেন, তোমার কাছ থেকে একটু সেবা পাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। দেখ না বৃদ্ধ মাতা- পিতা সন্তানের কাছে একটু শারীরিক সেবা পেলে আনন্দে যেমন আত্মাহারা হন। সিক্ত শুদ্ধ বস্ত্র দিয়ে তাঁকে স্নান করিয়ে দাও। তাঁকে আসনে বসিয়ে দেখ তিনি স্নান করে কেমন খুশী হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে আছেন। পরম পিতা শ্রীশ্রী লোকনাথ পূর্ণব্রহ্ম। তাঁর মধ্যেই সকল দেবদেবী বিরাজ করছেন। তিনিই নারায়ণ, তিনিই শিব, তিনিই মা কালী। কত ভক্তকেই তিনি কখনও কালী কখনও কৃষ্ণ বা শিবরূপে দর্শন দিয়েছেন, বুঝিয়েছেন সেই পরমসত্য- তিনিই নিরাকার সর্বব্যাপী ব্রহ্ম কেবল ভক্তের হিতের জন্য ভক্তের ভাব অনুযায়ী রূপ পরিগ্রহ করেন, ভক্তকে কৃতার্থ করার জন্য। পূজার আসনে তোমার ইষ্ঠ যদি নারায়ণ হয় তবে শ্রীশ্রীবাবার শ্রীচরণে নারায়ণ জ্ঞানে চন্দন চর্চিত তুলসী দুটি ভক্তিভরে দাও, সেই সঙ্গে তুলসীর মতন অনন্যভক্তি তাঁর চরণে প্রার্থনা জানাও। পূজার প্রতিটি ছোট ছোট অনুষ্ঠানের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর মধ্যে ধ্যানে ডুবে যাওয়ার বীজ। তোমার নিষ্ঠাতেই তা অঙ্কুরিত হবে। যদি বিল্বপত্র পাও তা ভক্তিভরে শিবজ্ঞানে বাবার মাথায় দাও কিংবা চরণে দাও। মনে এই ভাব আন, তিনি আশুতোষ, তোমার প্রদত্ত গঙ্গাজলে এবং বিল্বপত্রে তিনি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে তোমার প্রতি কৃপা দৃষ্টি দান করছেন। যদি রাঙ্গাজবা সংগ্রহ করতে পার তবে শ্রীশ্রী লোকনাথের রাতুল চরণে শুদ্ধাভক্তির জবা অর্পণ কর। প্রাণভরে দেখ কেমন তাঁর রাঙ্গাচরণে রাঙ্গাজবা সুন্দর দেখাচ্ছে- নিজেকে জবারূপে কল্পনা করে তাঁর চরণে যুক্ত হয়ে ভাব বিভোর হয়ে যাও। যদি একটু ফুলমালা সংগ্রহ করতে পার তবে তো সচন্দন করে তাঁকে মনের মতন করে সাজাও, তাঁর চরণেকে সাজিয়ে দাও। সর্বদা স্মরণ রাখবে এই ফুল বিল্বপত্র, তুলসী, কিংবা মালা, কোনটিই যেন ভালবাসার স্পর্শ ছাড়া তাঁকে দেওয়া না হয়। যদি ফুল বেলপাতা কিছুই না পাও তবে মানস নয়নে কল্পনা কর যেন তুমি তাঁকে ফুল বেলপাতা এবং মালায় মনের মতন করে সাজাচ্ছো। তুমি যেমন কল্পনা করবে তোমার মন সেই সময়ের জন্য সেই সেই আকারে আকরিত হবে। ফুল বেলপাাতা দিয়ে সাজাবার মানসপূজা যদি করতে থাক তবে তোমার মন সেই আকারে আকরিত হয়ে সাত্তি¡ক ভাবাপন্ন হবে। পূজা তো কেবল চিত্তের মলিনতা মিটিয়ে সাত্তি¡ক করে তোলার সাধনা। এবার পরিষ্কার পাত্রে একটু মিশ্রি কিংবা বাতাসা বা মিষ্ঠিান্ন যা তোমার দ্বারা তাঁর সেবার সম্ভব তাই তার কাছে আনন্দের সঙ্গে রাখো, এবং তাঁকে বল তিনি যেন তা গ্রহণ করেন। বলো না একমাত্র সংস্কৃত ভাষাই জানেন-কারণ সংস্কৃত দেবভাষা- তোমার অন্তরের আবেগযুক্ত ভালবাসার যে প্রকাশ, যার সঙ্গে রয়েছে তোমার চোখের দুফোঁটা অশ্রæ সেই ভাষাই প্রকৃত দেবভাষা। ঐ ভাষা শোনার জন্যই তো পরম করুনাময়ী শ্রীশ্রীবাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী এসেছেন তোমার কাছে, নিজেই নিজের আসন করে নিয়েছেন তোমার ঘরে। এইবার ধূপদীপ দিয়ে তাঁকে আরতি কর। ধূপ অর্থে সুগন্ধি। তোমার তাঁর প্রতি ভালোবাসা যত প্রবল হবে ততই তুমি সর্বঘটে তাঁকে দেখতে পাবে, তখন তোমার ব্যক্তিগত মান, অভিমান, অভাব অভিযোগ কমে আসবে। তাঁকে নিত্যসেবা ঠিক ঠিক করলে দেখবে তাঁর সঙ্গে প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠলে গুরুভক্তি তোমার মধ্যে নিজের গতিতে খেলতে আরম্ভ করবে-দেখবে অত সহজে তুমি আর বিব্রত, বিভ্রান্ত হবে না। তখন তাঁর উপর এক আন্তরিক আস্থার মাধ্যমে ভেতরে একটি প্রশান্তি বিরাজ করবে। এই গুরু নির্ভরতার ভাব যত গভীর হবে ততই তুমি শান্ত হবে। এই শান্ত অবস্থার, সাত্তি¡ক অবস্থান এক নিজস্ব সুগন্ধ আছে। ধূপ জ্বললে যেমন সুগন্ধ ছড়ায় ঠিক তেমনি সংসারে তাঁর চরণাশ্রয়ে থেকে সেবা পূজা এবং কর্তব্য পালনের মধ্যে দিয়ে নানান জাগতিক সংঘাতের ফলে তোমার অহংকারটি যেমন যেমন জ্বলবে তেমনই তোমার মধ্যে দিয়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়বে, তোমার সান্নিধ্য সকলের আনন্দের কারণ হবে। ঐ অন্তঃশুদ্ধির ধূপটি জ্বালাও তাঁর সামনে বসে, ঐ আরতিই প্রকৃত আরতি। মায়া মোহরূপ অন্ধকার তোমার মধ্যে তাঁর অস্তিত্ব জ্ঞানকে প্রকাশিত হতে দিচ্ছে না। তোমার হৃদয়ে তিনিই বিরাজ করছেন, তিনিই তোমার অস্তিত্বের অস্তিত্ব, তাঁকে চেনবার চেষ্টা কর, তাঁকে দেখার চেষ্টা কর, বাইরের প্রজ্বলিত দীপ তোমার ভেতরের জ্ঞানের দীপেরই প্রতীক। দীপ যেমন তোমার অন্ধকার ঘরের তামস হরণ করে ঠিক তেমনই গুরুরূপী জ্ঞানদীপ তোমারই হৃদয়ে রয়েছে। তাঁর সেবা পূজা এবং সচেতনভাবে তাঁকে আরাধনার মাধ্যমে তাঁকে জাগ্রত করতে হবে। অন্তরের গুরু তোমার নিষ্ঠা, বিশ্বাস এবং অভ্যাসের মাধ্যমেই জেগে উঠবে। তিনি জেগে উঠলেই মায়ার অন্ধকার আর তোমাকে গ্রাস করতে পারবে না, সৎ অসৎ-এর বিচার সহজ হয়ে যাবে, নিত্যবস্তু তুমি চিনে নিতে পারবে। প্রজ্বলিত দীপশিখা দিয়ে তাঁকে আরতি করার সময় তাঁর কাছে প্রার্থনা জানাও যেন তাঁর কৃপায় তোমার মধ্যে সত্যস্বরূপ যে ভগবৎ প্রকাশ সেই নিত্য প্রকাশিত দীপ স্বপ্রকাশিত হয়, তুমি মায়ামোহের উর্দ্ধে তাঁর ভুবনমোহন রূপ দর্শন করে এই জীবনেই জন্ম-মৃত্যুর কালচক্রের থেকে মুক্তি লাভ করতে পার। এইভাবে পূজার পর স্থিরাসনে বসে, ঠিক ঠিক ভাবযুক্ত পূজার এবং তাঁর বন্দনা পাঠের মধ্যে দিয়ে অন্তরে অনুভব করবে এক অনাবিল আনন্দ। সেই আনন্দকে ঘনীভূত করার জন্য এবার তাঁর নাম জপে মন দাও। বাবা লোকনাথ নামই তো নাম। চিত্ত শুদ্ধ করার জন্য সকল যুগপুরুষ এবং বাবা স্বয়ং গুরুপ্রদত্ত নাম জপের বিশেষ মহিমা কীর্তন করেছেন। বারবার ইষ্টনাম-গুরুনাম অন্তরে উচ্চারণ করার নাম জপ। “জপাৎ সিদ্ধিঃ”। কলি যুগে নাম জপেই সিদ্ধি। নাম এবং নামী দুই-ই এক, তাঁর নাম বারবার জপের মধ্যে দিয়ে অন্তরের অশুদ্ধি দূর হয় এবং ইষ্টদর্শনের পথকে প্রশস্ত করে। সর্ব যুগেই বহু সাধক কেবল এই নাম জপ নিষ্ঠাভরে অনুষ্ঠান করে উচ্চ অবস্থা লাভ করেছেন। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন সব যজ্ঞের মধ্যে জপ যজ্ঞই শ্রেষ্ঠ। শ্রীশ্রী বাবা লোকনাথ নাম যখন জপ করবে তখন খেয়াল রাখবে তা যেন আন্তরিক এবং ভাবপূর্ণ হয়। অনেকেই হাজার হাজার জপ করে কিন্তু তাঁর মধ্যে ভাবের বা আন্তরিকতার অভাব বশতঃ, তেমন কোন চারিত্রিক পরিবর্তন দেখা যায় না। চোখ বন্ধ করে জপ কর কেন? অস্থির মন নিয়ে চোখ বন্ধ করলে মন আরও চঞ্চল হবে,চোখ খুলে শ্রীশ্রীবাবার ছবির মধ্যে তাঁর আকর্ণবিস্তৃত করুণাময় চক্ষুদ্বয়ের মধ্যে মনোনিবেশ কর, তাতে গুরুশক্তি তোমার মধ্যে সঞ্চারিত হবে, আবার লোকনাথ আকারে তোমার মন আকরিত হবে, পরে অভ্যাস সিদ্ধ হলে চোখ বন্ধ করলেও সব অবস্থার মধ্যে বাবাকে দেখতে পাবে। মনে হবে খোলা বা বন্ধ চোখের সামনে শ্রীশ্রীবাবার অপলক চক্ষুদ্বয় তোমার দিকে তাকিয়ে আছেন তোমাকে সর্বপ্রকার বিঘেœর থেকে রক্ষা করছেন। এই নাম জপ নিত্য পূজান্তে সুখাসনে যতক্ষণ তোমার মন চায় বা সময় পাও কর, সংখ্যা রাখতে ইচ্ছা করলে রাখ অথবা শ্রীশ্রীবাবা যেমন বাঁ হাতের উপর ডান হাত রেখে বসেছেন তেমন করে রেখে অন্তরে জপ করে যাও। তাতে ধ্যানের আবেশ আসবে। জানবে পূজাপাঠ, আরতি, জপ সবই তাঁর কাছে পৌঁছানোর সিঁড়ি বিশেষ। তিনিই প্রধান, সিঁড়ি প্রধান নয়। তাই সব অবস্থার মধ্যে তোমার হৃদয় মন্দিরে যে এক অদ্বিতীয় পুরুষরূপে শ্রীশ্রীবাবা আছেন তাঁর প্রতি মনটা দেবার চেষ্টা করবে, তাঁর নাম জপ করার চেষ্টা করবে। পূজা এবং জপ শেষ হল শ্রীশ্রীবাবার চরণে জপ এবং পূজা সব অর্পণ করবে,-মনে মনে বলবে-বাবা তোমার পূজা তুমিই করিয়ে নিলে, তোমার নাম তুমিই করিয়ে নিলে,কৃপা করে আমার ভুলত্রæটি তুমি ক্ষমা করে দাও,কেবল এই আর্শীবাদ কর তোমার সন্তান যেন তোমার কৃপায় জাগতিক মায়ামোহের আবর্তের বাইরে তোমার যে আনন্দসাগর আছে তাতে অবগাহন করতে পারে। তোমার কৃপা ব্যতীত তো কিছুই সম্ভব নয়। তুমি কৃপা না করলে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তোমাকে স্মরণ করি। তুমি কৃপা করে করিয়ে নাও। তুমি এই অধম সন্তানের প্রতি প্রসন্ন হও। সন্তানকে শান্ত কর, শান্তি দাও। জগতে কেবল তোমার মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠিত হউক।
শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথের নিত্য পূজাবিধি
শুদ্ধাচারে আসনে বসিয়া আচমন করিবেন। দক্ষিণ হস্তে সামান্য পরিমান জল গ্রহন করিয়া ওঁ বিষ্ণু স্মরণ করিবেন। তিন বার পান করিবেন, “ওঁ তদ্ বিষ্ণু পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়: দিবীব চক্ষুরাততম্” এর পর কৃতাঞ্জলী পূর্বক নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ করিয়া বিষ্ণু স্মরণ করিবেন।
দেহশুদ্ধিঃওঁ নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্ব্বাবস্থাং গতোহপি বা যঃ স্মরেৎ পূন্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তর শুচি \ শ্রীশ্রী বাবা লোকনাথকে প্রাতঃকালে পূজার পূর্বে নিম্নলিখিত মন্ত্রে জাগরন করিবেন। “ওঁ উত্তিষ্ঠোতিষ্ঠ-গোবিন্দ ত্যাজ নিদ্রা জগৎপতে, ত্বয়ি উত্থিয়মানে চ উত্থিতং ভুবনত্রয়ম্\
জলশুদ্ধিঃ-অনন্তর কোশস্থিত জলে চন্দন পূস্প এবং দূর্ব্বা প্রদান করিয়া,নিম্নোক্ত মন্ত্রে জলশুদ্ধি করিবেন।“ওঁ গঙ্গে চ যমুনেচৈব গোদাবরী সরস্বতি। নর্ম্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু\ তাহার পর “ওঁ এই মন্ত্রের অর্ঘ্যরে উপর ১০ বার জপ করিয়া জলের ছিটা মস্তকে এবং পূজার উপকরন সমূহে দিবেন।
আসনশুদ্ধিঃ-“ওঁ এতে গন্ধ পূষ্পে ওঁ হ্রৃীং আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ”। এই মন্ত্র পাঠ করিয়া আসনের উপর উহা দিবেন। আসন স্পর্শ করিয়া পাঠ করিবেন।
আসনমন্ত্রস্যঃ ওঁমেরুপৃষ্ঠঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কুর্ম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ। অনন্তর হাতজোড় করিয়া পাঠ করিবেন-ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকাদেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরুচাসনম্। জল-শুদ্ধিঃ অঙ্কুশমুদ্রা দ্বারা কোশার জলে তীর্থ আবাহন করিয়া পাঠ করিবেন। “ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী। নর্ম্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু ”
পুষ্প-শুদ্ধিঃ পূষ্পগুলি স্পর্শ করিয়া পাঠ করিবেন-ওঁ পূষ্পে পূষ্পে মহাপূষ্পে সুপূষ্পে পূষ্পসম্ভবে। পূষ্পচয়াবকীর্ণে চ হূং ফট্ স্বাহা।
সূর্য্যার্ঘ্যদানঃ দূর্ব্বা, আতপচাউল, রক্তচন্দন, রক্তজবা, অভাবে রক্তপূষ্প দিয়ে অর্ঘ্য করিবেন-ওঁ নমোঃ বিবস্বতে ব্রহ্মন্ ভাস্বতে বিষ্ণুতেজসে জগৎসবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্ম্মদায়িনে।ইদমর্ঘ্যং ওঁ নমো ভগবতে শ্রীসূর্য্যায় নমোঃ \
সূর্য্য প্রনামঃ ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ ধান্তারিং সর্ব্বপাপাঘাœং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্\ গণেশদির অর্চনাঃ “এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ গণেশায় নমঃ, এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ শিবাদি পঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ, এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ আদিত্যাদি নব গ্রহেভ্যো নমঃ, এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশ দিকপালেভ্যো নমঃ, এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ মৎস্যাদি দশ অবতারেভ্যো নমঃ, এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ কাল্যাদি দশ মহাবিদ্যাভ্যো নমঃ, এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ নারায়ণায় নমঃ,এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ শ্রীবিষ্ণুবে নমঃ,এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ সর্ব্বাভ্যোদেবভ্যো নমঃ, এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ সর্ব্বাভ্যেদেবিভ্যো নমঃ,এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ নমঃ ভগবতে শ্রীশ্রী লোকনাথায় নমঃ”\
আচমনীয় দানঃ-আচমনীয় অর্থাৎ শ্রীশ্রী বাবার শ্রীমুখ-জল দ্বারা প্রক্ষালন:,নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করিবেন যথা“সর্ব্বতীর্থ সমাযুক্তং সুগন্ধি নির্মল জলং আচম্যতাং দত্তং গৃহীত্বা পরমেশ্বর”।
বাবার স্নানঃ- “গঙ্গা সরস্বতী বেরা পয়োঞ্চী-নর্মদাজলে স্নাপিতোহমি”
বাবার চরণে তুলসীপাতা দানঃ- ওঁ নমস্তে বহুরূপায় বিষ্ণবে পরমাতœনে স্বাহা”বলিয়া তুলসীপাতা দান করিবেন।
সাক্ষ্যমন্ত্রঃ- কৃতাঞ্জলী পূর্ব্বক নিম্নোলিখিত মন্ত্রপাাঠ করিবেন। “ওঁ সূর্য্য সোমো যমঃ কাল সন্ধ্যে ভুতান্যহঃ ক্ষপা। পবনো দিক্পতির্ভুমিরাকাশং খচরামরাঃ। ব্রাহ্মং শাসনমাস্থায় কল্পধবমিহ সন্নিধিম্। ওঁ তৎসৎ -অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু \ ধ্যান করিয়া পূষ্প দিবেন।
অর্পনঃ- নিম্নোক্ত মন্ত্রে ধ্যান করিয়া শ্রীশ্রী বাবার পাদপদ্মে পূষ্পার্পণ করিবেন। “ওঁ ধ্যায়েচ্ছিরসি শুক্লাজে দ্বিনেত্র দ্বিভূজং গুরুম, শ্বেতাম্বর পরিধানং শ্বেতমাল্যানু লেপনম্। বরাভয় করং শান্তং করুনাময় বিগ্রহমা বামেনোৎপল ধারিন্যা শক্ত্যালিঙ্গিত বিগ্রহম্। স্নেরানম্ সুপ্রসন্নং সাধকা ভিষ্টদায়কম। ওঁ নমঃ শ্রীলোকনাথায় ধ্যানম্ সমর্পয়ামি। এই মন্ত্রে শ্রীশ্রী বাবার পদকমলে পূষ্পদান করিবেন।
উপাচারমন্ত্রঃ- “পাদ্যম গঙ্গোদকং নির্মলং চ সর্বা সৌগন্ধ সংযুতম্। পাদপ্রক্ষলনার্থায় দত্তং তে প্রতিগৃহ্যতাম্”। উপরোক্ত মন্ত্র পাঠ করিয়া আমন্ত্রন করিয়া ওঁ নমঃ শ্রী লোকনাথায় আবাহয়ামি বলিয়া পাদ্যম্ সমর্পন করিবেন।
অর্ঘ্যমঃ-নমস্তে দেব দেবেশ নমস্তে করুনাম্বুধো করুনা কুরু মে দেব গৃহান অর্ঘ্য নমোহস্ততে, ওঁ নমঃ শ্রী লোকনাথায় অর্ঘ্যম সমর্পয়ামি। এই মন্ত্রে শ্রীশ্রী বাবার অর্ঘ্য দান করিবেন।
আচমনমঃ-ওঁ শ্রী লোকনাথায় আচমনীয়ম, সমর্পয়ামি।এই মন্ত্রে শ্রীশ্রী বাবাকে চন্দনচর্চিত করিবেন। গন্ধমঃ(চন্দন) ওঁ নমঃ শ্রীলোকনাথায় গন্ধম,সমার্পয়ামি। এই মন্ত্রে বাবা কে চন্দন চর্চিত করিবেন।
ধূপমঃ- ওঁ নমঃ শ্রীলোকনাথায় ধূপম,সমার্পয়ামি। এই মন্ত্রে বাবা কে ধূপ দিবেন। দীপম্ ওঁ নমঃ শ্রীলোকনাথায় দীপম্, সমার্পয়ামি। এই মন্ত্রে বাবা কে দীপ দিবেন। নৈবেদ্যম্ স্ববামে পবিত্র জায়গায় জল দ্বারা চতুঙ্কোন মন্ডল অঙ্কিত করিয়া তাহার উপর নৈবেদ্য ও ভোগের দ্রব্যাদি স্থাপন করিবেন। মন্ত্র যথা। নৈবেদ্যং গৃহ্যতাম, দেব ভক্তিমে অচলাং কুরু। ঈপ্সিতং মে বরং দেহি পরত্র চ পরাগতিম্। শর্করাখাং খাদ্যানি দধি ক্ষীর ঘৃতানি চ। আহারো ভক্ষ্যভোজ্যং চ নৈবেদ্যং প্রতিগৃহ্যতাম্। ওঁ নমঃ শ্রীশ্রী লোকনাথায় নৈবেদ্যং নিবেদয়ামি \
বিভিন্ন ঋতু প্রধান ফল সমূহ বাবার উদ্দেশ্যে নিবেদনের মন্ত্রঃ-নানা বিধানি দিব্যানি মধুরানি ফলানি বৈ ভক্ত্যাপির্তানি সর্ব্বানি গৃহান পরমেশ্বর। ওঁ নমঃ শ্রীশ্রী লোকনাথায় ঋতুফলং সমর্পয়ানি
অনন্তর মন্ত্রঃ-ওঁ প্রাণায় স্বাহা, ওঁ অপ্রানায় স্বাহা, ওঁ ব্রাহ্মনায় স্বাহা, ওঁ উদানায় স্বাহা,ওঁ সমানায় স্বাহা,ওঁ মধ্যে মধ্যে অমৃত পানীয় সমর্পয়ামি। ভোগনিবেদনের পরে ওঁ নমঃ ভগবতে শ্রী লোকনাথায় নমঃ(৭ বার জপ করিবেন)।
পূষ্পাঞ্জলীঃ- ফুল বেলপাতা হাতে নিয়েঃ- যোগীন্দ্রায় নমস্তুভ্যত্যাগী স্বরায় বৈ নমঃ। ভূমানন্দ স্বরূপায় লোকনাথায় নম: নম: শ্রীমৎ পরং ব্রহ্ম গুরু বদামি। শ্রীমৎ পরং ব্রহ্ম গুরুং ভজামি। শ্রীমৎ পরং ব্রহ্ম গুরুং স্মারামি এস স্বচন্দন পূষ্পবিলপত্রাঞ্জলী ওঁ নমঃ ভগবতে শ্রীলোকনাথায় নম: নম:\ এই মন্ত্রে ৩ বার বলিবেন।
প্রনাম মন্ত্রঃ- ওঁ ব্রহ্মানন্দং পরম সুখদং কেবলং জ্ঞান মূর্ত্তিম।দ্বন্দাতিতং গগন সদৃশং তত্ত¡ মস্যাদি লক্ষ্যমম্। একংনিতং বিমলচলনং সর্ব্বধি সাক্ষিভূতম্। ভাবাতীতং ত্রিগুন রহিতং সদগুরু তা¡ং নমামী। ওঁ অখন্ডমন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্। তৎপদং দশিতং যেন তম্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ\
ক্ষমাপ্রর্থানাঃ-ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ভবেৎ। পূর্ণং ভবতু তৎ সর্ব্বং তৎ প্রসাদাৎ জনার্দ্দন\ মন্ত্রহীনম, ক্রিয়াহীনম,ভক্তিহীনম,পরমেশ্বর। যদ্ পূজিতম্ ময়াদেব পরিপূনং তদস্থুমে। আবাহনং নজানামি বিসর্জ্জনম্ পূজাবিধিম,ন জানামি, ক্ষমস্ব জগদীশ্বর।
আরতীঃ- পঞ্চপ্রদীপ,কর্পুর, জলশঙ্খ,বস্ত্র, পূস্প,ধুপ,চামরদ্বারা লোকনাথ বাবা কে আরতি করিবেন।
সব শেষে বাবা কে মন প্রাণ ভরে ডাকলেই বাবা ভক্তের ডাকে সারা না দিয়ে পারেন না তাই তো বাবা লোকনাথ বলেছেন
“তোদের কাতর ডাকে আমার অন্তর বিচলিত হয়,
তাইতো তোদের কাছে ধরা না দিয়ে পারি না।”
বাবার মূল গানঃ-জয় বাবা লোকনাথ,জয় মাতা লোকনাথ,জয় ব্রহ্ম লোকনাথ,জয় শিব লোকনাথ,জয় গুরু লোকনাথ,ত্বমেব মাতা,পিতা ত্বমেব ত্বমেব বন্ধু সখা ত্বমেব। ত্বমেব বিদ্যাদ্রবিনং ত্বমেব। ত্বমেব সর্ব্ব মম দেবা দেব